সাঁ-দ্যনি (ফরাসি : [sɛ̃d(ə)ni] ()) ফ্রান্সের পারির উত্তর শহরতলীর একটি কম্যুন। এটি পারির কেন্দ্র থেকে ৯.৪ কিমি (৫.৮ মাইল) দূরে অবস্থিত। সাঁ-দ্যনি সেন-সাঁ-দ্যনি দেপার্তমঁর একটি উপ-প্রশাসনিক জেলা এবং সাঁ-দ্যনির আরোঁদিসমাঁর আসন। সাঁ-দ্যনির বাসিন্দাদের দিওনিসাঁ নামে ডাকা হয়।
এখানে ফ্রান্সের জাতীয় ফুটবল ও রাগবি স্টেডিয়াম স্তাদ দ্য ফ্রান্স অবস্থিত, যা ১৯৯৮ ফিফা বিশ্বকাপের জন্য নির্মিত হয়েছিল। শহরটি পূর্বে শিল্প উপনগরী ছিল, যা বর্তমানে অর্থনীতির ভিত্তিতে পরিণত হচ্ছে।
২য় শতাব্দীতে সাঁ-দ্যনি শহরের বর্তমান অবস্থানে কাতোলাকুস নামে একটি গ্যালো-রোমান গ্রাম ছিল। ২৫০ সালে পারির প্রথম বিশপ এবং ফ্রান্সের সন্তদের পৃষ্টপোষক সন্ত দ্যনি খুন হন এবং তাকে কাতোলাকুসের সমাধিতে সমাহিত করা হয়। দ্যনির সমাধি অচিরেই উপাসনার স্থান হয়ে ওঠে। ৪৭৫ সালের দিকে সন্ত জঁভিয়েভ দ্যনির সমাধিতে একটি ছোট চ্যাপল নির্মাণ করেন, যা সে সময়ে তীর্থযাত্রার জনপ্রিয় স্থান হয়ে ওঠে। এই চ্যাপলটি প্রথম দাগোবের (আনু. ৬০৩-৬৩৯) পুনর্নির্মাণ করেন এবং তা রাজকীয় মঠে পরিণত হয়। দাগোবের এই মঠে বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা প্রদান করেন, যেমন পারি থেকে বিশপদের স্বাধীনতা, বাজার রাখার অধিকার, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল তাকে সাঁ-দ্যনির বাজিলিকায় সমাহিত করা হয়, যে ঐতিহ্য তার প্রায় সকল উত্তরসূরি অনুসরণ করেন, তথা প্রায় সকল ফরাসি রাজাকে এখানে সমাহিত করা হয়েছে। মধ্যযুগে দাগোবেরের প্রদত্ত সুযোগ সুবিধার জন্য সাঁ-দ্যনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সমগ্র ইউরোপের বণিকেরা এই মঠের বাজারে বেচা-কেনা করতে আসত।
১১৪০ সালে রাজার উপদেষ্টা অ্যাবট স্যুগে সাঁ-দ্যনির নাগরিকদের জন্য আরও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আসেন। তিনি সাঁ-দ্যনির বাজিলিয়ার আওতা বৃদ্ধির কাজ শুরু করেন, যা এখনো বিদ্যমান। একে গোথিক স্থাপত্যের প্রারম্ভিক ভাগের প্রথম উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। নতুন গির্জাটি ১১৪৪ সালে উপাসনার জন্য পৃথক করা হয়।
শতবর্ষ ব্যাপী যুদ্ধে সাঁ-দ্যনির জনসংখ্যা হ্রাস পায়। যুদ্ধের পর ১০,০০০ জনসংখ্যা থেকে ৩,০০০ জন বেঁচে ছিল।
ফরাসি ধর্মের যুদ্ধে ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্টদের মধ্যে ১৫৬৭ সালের ১০ই নভেম্বর সাঁ-দ্যনির যুদ্ধ হয়। প্রোটেস্ট্যান্টরা পরাজিত হলেও ক্যাথলিকদের কমান্ডার আন দ্য মোঁমোরঁসি খুন হন। ১৫৯০ সালে শহরটি চতুর্থ অঁরির নিকট সমর্পণ করা হয়। অঁরি ১৫৯৩ সালে সাঁ-দ্যনি মঠে ক্যাথলিক ধর্মে ধর্মান্তরিত হন।
রাজা চতুর্দশ লুই (১৬৩৮-১৭১৫) সাঁ-দ্যনিতে বুনন ও সুতা কাটা এবং রং করা-সহ কয়েকটি শিল্প চালু করেন। তার উত্তরসূরি পঞ্চদশ লুইয়ের (১৭১০-১৭৭৪) কন্যা কার্মেলিত কনভেন্টের একজন নান ছিলেন। তিনি এই শহরের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং এতে করে পঞ্চদশ লুই এই কনভেন্টে একটি চ্যাপল যোগ করেন ও রাজকীয় মঠের দালানগুলো নতুন করে সাজান।
সাঁ-দ্যনিতে মেট্রো, আরইআর, ট্রাম ও ট্রান্সিলিয়েন যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। সাঁ-দ্যনি রেল স্টেশন ১৮৪৬ সালে নির্মিত হয়, যা পূর্বে সাঁ-দ্যনির একমাত্র রেল স্টেশন ছিল। বর্তমানে এটি ট্রান্সিলিয়েন পারি - নর (লাইন আশ) উপশহর রেল লাইন ও আরইআর লাইন ডি'র মধ্যবর্তী স্টেশন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সাঁ-দ্যনিতে ২৯টি সরকারি প্রাক-বিদ্যালয় বা নার্সারি বিদ্যালয় রয়েছে। এখানে ৩০টি সরকারি বাধ্যতামূলক বিদ্যালয় রয়েছে, তন্মধ্যে একটি আন্তঃসাম্প্রদায়িক বিদ্যালয়। এই শহরে আটটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে। এই শহরের কলেজগুলো হল লিস বার্থোল্ডি, লিস পল এলুয়ার, লিস স্যুগে, ও লিস দাপ্লিকাশিও দ্য লেনা।
সাঁ-দ্যনিতে একটি বেসরকারি বাধ্যতামূলক, মাধ্যমিক ও উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে এবং একটি বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে।
Owlapps.net - since 2012 - Les chouettes applications du hibou